ফারাক্কা: ৯০ বছর বয়সে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর লংমার্চে নেতৃত্ব দেয়ার গল্প
১৯৭৬ সালের ১৬ই মে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ৯০ বছর বয়সে যে লংমার্চে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই লংমার্চের লক্ষ্য ছিল ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সৃষ্ট পানির সংকটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। ফারাক্কা বাঁধের কারণে গঙ্গা নদীর পানি প্রবাহে পরিবর্তন আসে, যা বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
পটভূমি ও প্রস্তুতি
ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের পর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পানির সংকট প্রকট হয়, যা কৃষি, মৎস্য এবং জীববৈচিত্র্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। ভারতের এই বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য মাওলানা ভাসানী লংমার্চের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭৬ সালের ২রা মে মাওলানা ভাসানীকে প্রধান করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট 'ফারাক্কা মিছিল পরিচালনা জাতীয় কমিটি' গঠিত হয়। পরে এই কমিটির সদস্য সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায়।
লংমার্চের আগে মাওলানা ভাসানী ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে একটি চিঠি লিখে এই লংমার্চের কারণ বর্ণনা করেন। সাংবাদিক এনায়েতউল্লাহ খান, আনোয়ার জাহিদ এবং সিরাজুল হোসেন খান এই চিঠি প্রস্তুত করতে মাওলানা ভাসানীকে সহায়তা করেন।
লংমার্চের আয়োজন
২৮শে এপ্রিল ১৯৭৬ সালে মাওলানা ভাসানী এক বিবৃতিতে সকলকে লংমার্চে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। লংমার্চটি রাজশাহী শহর থেকে শুরু হয় এবং প্রেমতলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মনকষা হয়ে শিবগঞ্জ পর্যন্ত ৬৪ মাইল অতিক্রম করে।
লংমার্চের দিন
১৬ই মে হাজার-হাজার মানুষ মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে রাজশাহী থেকে ফারাক্কা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। এই মিছিল এবং জনসভায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন, যা বাংলাদেশের জনগণের ঐক্য ও একাত্মতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।
লংমার্চের প্রভাব
মাওলানা ভাসানীর এই লংমার্চ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। মাওলানা ভাসানীর এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে এবং আন্তর্জাতিক মহলেও এটি ব্যাপক আলোচিত হয়।
উত্তরাধিকার
মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কা লংমার্চ আজও বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। তার এই সাহসী পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, জনগণের কল্যাণে তিনি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তার পূর্বাভাস এবং নেতৃত্ব পরবর্তীতে গঙ্গা পানি চুক্তি এবং অন্যান্য পানিসম্পদ ভাগাভাগি আলোচনা ও চুক্তির ভিত্তি স্থাপন করে।
মাওলানা ভাসানীর এই লংমার্চ একটি ঐতিহাসিক ও অনুপ্রেরণামূলক ঘটনা হিসেবে বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিতে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।
কোন মন্তব্য নেই