২০২৪ সালে বাংলাদেশের বন্যা কেন এতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল?
২০২৪
সালে বাংলাদেশের বন্যা কেন এতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল, তার পেছনে কয়েকটি মূল কারণ বিদ্যমান।
এই কারণগুলোকে প্রাকৃতিক, মানবসৃষ্ট এবং পরিবেশগত তিনটি মূল ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে।
নীচে এই কারণগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
প্রাকৃতিক কারণ
অতিবৃষ্টি ও বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি
২০২৪
সালে বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিশেষ করে জুলাই থেকে
আগস্ট মাসে অসময়ে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা দেশের প্রধান নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতাকে
ছাড়িয়ে গেছে। ফলে, নদীগুলো উপচে পড়ে এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।
হিমালয়
থেকে আসা পানির চাপ
বাংলাদেশের
অনেক নদীর উৎস হিমালয়ে অবস্থিত। ২০২৪ সালে হিমালয়ে অস্বাভাবিক তুষার গলন এবং অতিবৃষ্টির
কারণে এই নদীগুলিতে পানির প্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়, যা দেশের নদীগুলোর উপর
বিশাল চাপ তৈরি করে এবং বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
মানবসৃষ্ট কারণ
নদীর
গতিপথ পরিবর্তন ও বাঁধের অপ্রতুলতা
বিভিন্ন
উন্নয়নমূলক প্রকল্প এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে নদীর প্রাকৃতিক গতিপথ পরিবর্তন করা
হয়েছে, যা নদীর পানি সঠিকভাবে নিস্কাশনে বাধা সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি, দেশের অনেক বাঁধ
এবং নদীর তীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অব্যবস্থাপনার কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে, ২০২৪
সালের অতিবৃষ্টিতে এই বাঁধগুলো সহজেই ভেঙে গেছে।
জলবায়ু
পরিবর্তনের প্রভাব
জলবায়ু
পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের ধরণ এবং সময়কাল পরিবর্তিত হচ্ছে, যা বন্যার প্রকোপ বাড়াচ্ছে।
২০২৪ সালে বাংলাদেশে এই প্রভাব স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা গেছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি
এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে বন্যার ভয়াবহতা আরো তীব্র হয়ে উঠেছে।
পরিবেশগত
কারণ
বন
উজাড় ও ভূমির অবক্ষয়
বাংলাদেশের
বনাঞ্চল দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, যা বন্যার প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে হ্রাস করছে। বনাঞ্চল
কমে যাওয়ার কারণে ভূমির উপরিতলের জল ধারণ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে পানি দ্রুত নিচের দিকে
প্রবাহিত হয়ে বন্যা সৃষ্টি করে।
নদী
ভরাট ও দখল
নদী
দখল এবং নদী ভরাটের কারণে নদীগুলোর গভীরতা এবং প্রস্থ কমে গেছে। ফলে, সামান্য অতিরিক্ত
পানিতেই নদীগুলো উপচে পড়ছে এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ২০২৪ সালে এই কারণটি বন্যার
তীব্রতা বৃদ্ধির একটি অন্যতম প্রধান কারণ ছিল।
সমাজ এবং অর্থনীতির উপর প্রভাব
২০২৪
সালের বন্যার ফলে বাংলাদেশের সমাজ এবং অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। লক্ষাধিক মানুষ
গৃহহীন হয়ে পড়েছে, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বন্যার
পরবর্তী সময়েও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব এবং খাদ্য সংকট দেশের মানুষের দুর্ভোগ আরও
বাড়িয়েছে।
২০২৪
সালের বন্যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি
মানবসৃষ্ট এবং পরিবেশগত কারণগুলো এই বন্যাকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের
বিপর্যয় এড়াতে সরকারকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, নদী ব্যবস্থাপনা, এবং বন সংরক্ষণের
দিকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে, বাঁধ এবং নদী তীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন
এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে দেশের মানুষকে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ
থেকে সুরক্ষা দেওয়া যায়।
কোন মন্তব্য নেই